মরুদ্বীপ
সিমেন্টের ধূসর ফুটপাতে হেঁটেছি,
কালো পিচের রাস্তা ধরে,
ব্যথিত পায়ে, ক্লান্ত দেহে,
ম্লান চিত্তে, কত দশক ধরে,
বিদেশের শহুরে মরুভূমি-পথে।
সফরের মাঝে এসেছি কখনো
ছোটো কোনো মরুদ্বীপে,
যেখানে পেয়েছি কিছু বিরাম,
পেয়েছি সলিল, সান্তনা।
সেখানে, দুর্লভ কোনো বেঞ্চে বসে,
কম-দূষিত বাতাসের শ্বাস নিয়েছি।
প্রকৃতির সুগন্ধের সাথে শুঁকেছি
গাড়ির ইঞ্জিনের পাদের ঘ্রান।
******
তখন মনে হয়েছে যেনো
হয় শহরের চলতি কোলাহল
কোনো কারনে বিদায় নিয়েছে,
নয়তো নিজেকে আমার ইচ্ছামতো
বদলাতে দিয়েছে। সকল হট্টগোল,
পাগলামি, ঠেলাঠেলি, তাড়াহুড়ো যেনো
সরে গেছে। রয়েছে শুধু—শান্তির স্বাদ।
রাস্তার গাড়ির আসা যাওয়া
যথাকালে যেনো হয়ে গেলো—
মনোরম তীরের ঢেউয়ের ধুয়া।
উঁচু থেকে উড়োজাহাজের গর্জন
হ’লো—দূর সমুদ্রতীরের ডাক।
আবার যেনো শুনতে পেলাম—
এই জগতের শ্বাস-প্রশ্বাস।
******
তাই আজ, শরতের বিকেলে,
বাসা থেকে অনেক দূরে—
তাও পুরনো ঘরে ফিরে—
একটি বেঞ্চি খুঁজে পেয়ে,
তাতে আসন দখল করেছি।
সামনে দেখি, কিছু দূরে,
সূর্যের ঢালু কিরণ এসে
পাইন-গাছে ঢেলেছে আলো।
সেই আশীর্বাদে যেনো
গাছটা পূর্ণ, পুলকিত।
আমি যেখানে বসে আছি,
সেখানে আরামে এক খেলা চলছে।
ছায়াযুক্ত কয়েক যুবক
নেচে-নেচে খেলছে আলোয়।
বল্-টাকে, একে একে হাতে তুলে,
পাঠাচ্ছে, ধনু-রেখো-পথে,
উঁচু বাস্কেটবল-হুপের খোঁজে।
বাস্কেটবল কোর্টের মেজেতে দেখি
নীল-সাদা-সবুজ রঙ।
মনে আসে এতে, আহা,
সেই হারানো দিনের কথা,
সেই আকাশ-অরণ্য-জল,
সেই ধরিত্রী—প্রিয়, নির্মল।
পশ্চিমে, সূর্যের আলোয় আঁকা,
ক’টা চেনে-বাঁধা কুকুরের সহ,
এক দল মহিলার চলাফেরা।
আরো দূর থেকে শোনা যাচ্ছে,
শরতের রোদে, শিশুদের খেলা।
******
এই জগতের লীলার মাঝে
একটু বিরতি, একটু বিরাম,
কিছুটা আলগা হওয়ার কাল—
কুকুরের সাথে, মানুষের সাথে,
এই বিকেলের রৌদ্রে নাচন—
নয়তো শুধু আলোয় স্নান।
এমন সময় দেখি যে আবার—
দেখছে হেঁসে, আমার দিকে,
সেই পুরনো বন্ধু আমার—
নগরের ভিড়ে হারানো আমি।
******
জানি, এই দিনের আলোর শেষে,
সন্ধ্যে আসবে, ফিসফিসিয়ে।
তারাভরা আকাশগঙ্গা যেমন,
তেমনই জ্বলে উঠবে তখন
শহুরে রাস্তার আলোর মালা।
দিনের ম্লান আভা যখন
পশ্চিমে মৃত্যুশয়নে—যখন
বাকি মানুষ ঘরে চলে গেছে—
শুনতে পাবো আবার তখন,
এই আমার পুরনো বাসায়,
ঝিঁঝিদের সাঁঝের সঙ্গীত।
এইভাবে, নগর-সাগরে, আজও,
এই বাকি ছোটো দ্বীপে,
সেই চিরন্তন চক্র চলে।
জীবন ধরে, পেয়েছি এতে
ঝড়ের মাঝে রেহাই কিছু,
বিরোধের মাঝে শান্তি।
আমারই মতন, আরো কত জন
ফিরে পেয়েছে প্রাণ?
দিনের আলোর শেষ বিদায়ে
শুনেছে ঝিঁঝির গান?
এমনই মঠে, বুদ্ধ ব’সে,
পেয়েছিল নির্বাণ।
ওহ্লোন পার্ক (হার্সট আর মাক্গী রাস্তার মোড়ের কাছে)
বার্ক্লি, ক্যালিফোর্নিয়া
বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
(বাংলায় অনুবাদ: ৮ অক্টোবর)
-------------------------------------------------------------------
This is a translation, into Bengali, of the poem:
Scattered Greens
No comments:
Post a Comment